,

৫২ বছরেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ‘দুর্যোগ’ কাটেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে দুর্যোগের ঘনঘটা কাটিয়ে ওঠার জন্য গড়ে ওঠে একটি অধিদপ্তর, যার নাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। কিন্তু বায়ান্ন বছরেও নিজেদের দুর্যোগের সমাধান করতে পারেনি।

ত্রাণ কার্য পরিচালনার জন্য ৪৯৫টি উপজেলায় নেই কোন গাড়ি। উপজেলা অফিসে এখনো নিয়োগ হয়নি উপ সহকারী প্রকৌশলী।

প্রতি উপজেলায় একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। পদ সৃষ্টি করা থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না উপসহকারী প্রকৌশলীদের।

এই ৫২ বছর ধরেই এক অফিস কর্মকর্তা ও অফিস সহকারি দিয়ে চলছে উপজেলার কার্যক্রম। আর জেলা চলছে এক কর্মকর্তা ও ৬ কর্মী দিয়ে।

এতে চলমান বন্যা ছাড়াও বড় বড় দুর্যোগে সঠিকভাবে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না এ অধিদপ্তর। এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে দেশ স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে দুর্গতদের উদ্ধার ও ত্রাণ দিতে কাজ করছে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি তৎপর থাকার কথা থাকলেও তাদের নেই সেই সক্ষমতা, সেই জনবল। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সহকারি এই দুজন দিয়ে চলছে উপজেলা ত্রান কাজ। জেলায় কর্মরত আছেন একজন কর্মকর্তা ও ৬ জন কর্মী।

এই হচ্ছে তাদের সক্ষমতা। এমনকি ত্রান কার্য পরিচালনার জন্য জেলায় একটি গাড়ি ও নেই। এর ফলে বড় বড় ঝড় বন্যা ও দুর্যোগে ত্রাণ পরিচালনা করা অনেক সমস্যা হয়ে যায়। মোট পদ ২৭১০ টি।

৫২ বছরে কর্মী বারার বদলে বেশ কিছু পদ খালি। এমন অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ২০১২ বাস্তবায়ন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও উপ সহকারী প্রকৌশলী, কার্যসহকারী, অফিস সহায়কদের নিয়োগ না হলে এ সংকটের সমাধান হবে না। চলমান এই সংকটের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় দায়ী। কারণ দীর্ঘদিন এই অবস্থা চললেও বিষয়টি নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপ প্রকল্প পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল সংকট। ১৯৭২ সালে দুজনকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলা কার্যক্রম চালু হয়। এখন পর্যন্ত সেভাবেই আছে।অতি দ্রুত জনবল কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।

উপসহকারী প্রকৌশলী পলাশ কুমার রায় বলেন, ২০১১ সা‌লে নি‌য়োগ প্রাপ্ত হ‌য়ে এখন পর্যন্ত দু‌র্যোগকালীন সম‌য়ে দু‌র্যো‌গে ক্ষ‌তিগ্রস্থ‌দের ত্রাণ বিতরণ, গ্রামীণ অবকাঠা‌মো নির্মাণ, অ‌তি দ‌রিদ্রদের জন‌্য সরকা‌রের সামা‌জিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বি‌ভিন্ন প্রকল্প সহ বিভিন্ন ধর‌ণের কাজে উপ‌জেলা পর্যা‌য়ে উপ‌জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে প্রত‌্যক্ষভা‌বে সহ‌যোগিতা ক‌রে আসছি আমরা শীর্ষক প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলীরা। ক‌রোনাকালীন সম‌য়ে নি‌জের জীবন বা‌জি রে‌খে সরকারি বি‌ভিন্ন দা‌য়িত্ব পালন ক‌রেছি। সুদীর্ঘ একযুগ চাকরি ক‌রেও আজ আমা‌দের ম‌ধ্যে অ‌ধিকাংশ সহকর্মী‌কে উপ‌জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হি‌সে‌বে পদায়ন দি‌লেও আমরা ১৯৫ জন এখনও প্রক‌ল্পে চাকরি ক‌রে যা‌চ্ছি। গত ১৪ মাস ধ‌রে আমা‌দের বেতন নেই। আমরা ১৯৫ জন উপ সহকারী প্র‌কৌশলী বৈষ‌ম্যের শিকার হ‌য়ে মান‌বেতন জীবন কাটা‌চ্ছি। মহামান‌্য সুপ্রীম কোর্ট ৪২১টি নতুন পদ সৃষ্টি ক‌রে আমা‌দের নি‌য়োগ দেয়ার নি‌র্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থে‌কে ২০০টি উপ সহকারী প্রকৌশলীর পদ সৃ‌ষ্টির অনু‌মোদন পাওয়ার প‌রেও কর্তৃপ‌ক্ষের উদাসীনতায় আমা‌দের‌কে অদ‌্যব‌ধি নি‌য়োগ দেয়া হয়‌নি। অদৃশ্য কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফিরে আসছে ১৯৫ জন উপসহকারী প্রকৌশলীর ফাইল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপ সহকারী প্রকৌশলী পরিষদের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মো. মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ৪ বার ২০০ উপ সহকারী প্রকৌশলীদের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমলে নেয়নি অর্থ মন্ত্রনালয়। এ কারণে জনবল বাড়ানোর চেষ্টা করলেও আমাদের ১৯৫ জন প্রকল্পের উপ সহকারী প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘ ১৩ বছর জীবন বাজি রেখে এ দপ্তরের সকল কাজ সম্পন্ন করছি। আমাদের ১৯৫ জন উপসহকারী প্রকৌশলীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘আমাদের নিয়োগের জন্য ২০০ টি উপসহকারী প্রকৌশলী পদ সৃষ্টি থাকা সাপেক্ষেও আমাদের কোন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। বারবার চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয় গেলেও তা অদৃশ্য কারণে ফেরত আসছে। আমরা এই অধিদপ্তরে ২০১১ সাল থেকে আমরা কর্মরত আছি। আমাদের দাবি ১৯৫ জন উপ সহকারী প্রকৌশলীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর